রামুতে প্রান্তিক পেশাজীবী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অবহিতকরণ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার, ২৯ মে বিকালে রামু উপজেলা পরিষদের হিমছড়ি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম। মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সমাজসেবা অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম।
সেমিনারে জানানো হয়, ২০২২ সালে জরিপ তথ্যসূত্র মতে কক্সবাজার জেলায় প্রান্তিক পেশাজীবী ৬ হাজার ৪০৭ জন। এর মধ্যে রামু উপজেলায় ৯২৬ জন। রামুতে প্রান্তিক পেশাজীবী মানুষের মধ্যে কামার ২৬ জন, কুমার ৩৩ জন, নাপিত ৩৯১ জন, বাঁশ ও বেত প্রস্তুতকারক ২৩৫ জন, কাঁশা ও পিতল প্রস্তুতকারী ৩ জন, জুতা মেরামত ও প্রস্তুতকারী ১৩ জন, লোকজ ২ জন, নকশী কাঁথা প্রস্তুতকারী ১২৫ জন, শিতল পাটি প্রস্তুতকারী ৯৮ জন এবং লোকশিল্পী ৪ জন।
সেমিনারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, প্রান্তিক পেশাজীবী মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে, আয়বর্ধক মানুষে পরিণত করতে হবে। পেশাকে কিভাবে আধুনিক করা যায়, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করা যায়, সেভাবে কর্মপরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে। সুদূর প্রসারী আধুনিক চিন্তাকে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলতে হবে। তিনি বলেন, পেশাকে সম্মান জানাতে হবে। পুরোনো ধারণায় পরিবর্তন এনে, আধুনিকায়নের মাধ্যমে পেশার পরিধি বাড়াতে হবে।
এতে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, দেশের মূল জনসংখ্যার ক্ষুদ্র একটি অংশ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। আবহমানকাল থেকেই এ জনগোষ্ঠী অবহেলিত ও অনগ্রসর। প্রাচীন বাংলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে পরিচালিত হত। সামাজিক জীবন থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সর্বত্রই বংশ পরম্পরায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের পেশাকে ধারণ করে, নিজেদের জীবন জীবিকা পরিচালনা করছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে জীবিকার প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে এসব পেশাজীবী মানুষ। তাদের দীর্ঘ বছরের আর্থিক উৎস থেকে ছিটকে পড়ছে এবং কর্মক্ষম মানুষগুলো বেকার হয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের পেশাকে আধুনিকায়ন করা হবে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাদের বেকারত্ব দূর করা হবে। কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন প্রান্তিক পেশাজীবী মানুষগুলো আধুনিক বাংলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সুযোগ পেয়ে নবজীবন লাভ করবে। একই সাথে ফিরে আসবে গ্রাম ভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জোয়ার।
প্রান্তিক পেশাজীবী কামার, কুমার, নাপিত, বাঁশ ও বেত প্রস্তুতকারক, কাঁশা ও পিতল প্রস্তুতকারী, জুতা মেরামত ও প্রস্তুতকারী, নকশী কাঁথা প্রস্তুতকারী এবং লোক শিল্প যেমন, গাম্ভীরা, আলকাপ, নকশী হাতপাখা, শখের হাড়ি তৈরি ও নকশা আঁকা, ভাওয়ারা, ভাটিয়ালী, বাউল গান, শীতলপাটি বা সমজাতীয় শিল্প। এসব পেশাজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে জানান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম।
রামু উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল গালিবের স্বাগত বক্তব্য ও উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে সুশাসনের জন্য নাগরিক 'সুজন' রামু উপজেলার সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলম, রামু উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুশান্ত দেবনাথ, রামু উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেদ শহীদ, প্রান্তিক পেশাজীবী প্রতিনিধি ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশ নেন।